মুর্শিদাবাদে ওয়াকফ আইনের জেরে উত্তাল পরিস্থিতি — শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, “৪০০ হিন্দু পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে”
Waqf Law Row: Violence Hits Murshidabad, Hindu Families Flee in Fear
রিপোর্টার: | তারিখ: ১৪ এপ্রিল, ২০২৫ | স্থান: মুর্শিদাবাদ, পশ্চিমবঙ্গ
পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার একাধিক এলাকায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া হিংসাত্মক ঘটনার পর রাজ্য রাজনীতিতে উত্তেজনা চরমে। বিজেপি-র বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বিস্ফোরক দাবি করেছেন— “ওয়াকফ আইনের নামে হিন্দুদের জমি ও সম্পত্তি জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা করা হচ্ছে, যার ফলে অন্তত ৪০০টি হিন্দু পরিবার নিরাপত্তাহীনতার কারণে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে।”
ঘটনার সূত্রপাত
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, একাধিক গ্রামে কয়েকটি সম্পত্তিকে হঠাৎ করেই ওয়াকফ বোর্ডের অন্তর্গত বলে দাবি করা হয়। এসব জমির মালিকানা বহু বছর ধরে হিন্দু পরিবারগুলির হাতে থাকলেও, হঠাৎ করেই মুসলিম সম্প্রদায়ের কিছু গোষ্ঠী ওই জমি নিজেদের দাবি করে বসে। এর প্রতিবাদে স্থানীয় বাসিন্দারা আন্দোলনে নামে।
এই আন্দোলনই রূপ নেয় হিংসায়। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বাড়ি ও গাড়িতে। পুড়ে যায় দোকানপাট। হামলার শিকার হন নিরীহ গ্রামবাসীরা। ভয়ে এলাকা ছাড়েন শতাধিক পরিবার।
শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্য
একটি সাংবাদিক সম্মেলনে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,
“ওয়াকফ বোর্ডের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে তুষ্ট করতে গিয়ে রাজ্য সরকার হিন্দুদের প্রতি সম্পূর্ণ অবিচার করছে। তাদের সম্পত্তি জোর করে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, অথচ প্রশাসন চুপ করে সব দেখছে। আজ মুর্শিদাবাদের ৪০০ পরিবার রাস্তায়। এই চিত্র বাংলার গণতন্ত্রে কলঙ্ক।”
তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ দাবি করেন এবং কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করার কথাও জানান।
ওয়াকফ আইন নিয়ে বিতর্ক
ওয়াকফ আইন ১৯৯৫ সালে প্রণীত হলেও, সাম্প্রতিক সময়ে এই আইনের অপব্যবহার নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক দানা বাঁধছে। ব্যক্তিগত মালিকানাধীন সম্পত্তিকে ওয়াকফ বোর্ড নিজেদের সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করছে এমন অভিযোগ বিভিন্ন রাজ্যে উঠছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রমাণ ছাড়াই এই দখলদারি চলছে বলে দাবি।
রাজ্য সরকারের নীরবতা প্রশ্নের মুখে
যখন রাজ্যের বিরোধী নেতারা সরব, তখন শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সরাসরি প্রতিক্রিয়া জানায়নি। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কোনও তদন্ত বা পদক্ষেপের ঘোষণা আসেনি, যা আরও উদ্বেগের সৃষ্টি করছে।
সাধারণ মানুষের আতঙ্ক
ঘটনার জেরে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। অনেকেই বলছেন, “জমির দলিল থাকার পরেও যদি আমাদের এলাকা ছাড়তে হয়, তবে আমরা কোথায় যাবো? এ কোন বাংলা গড়া হচ্ছে?”
উপসংহার
ওয়াকফ আইন ঘিরে মুর্শিদাবাদের হিংসা একটি বৃহত্তর সমস্যার ইঙ্গিত দিচ্ছে — ধর্ম, রাজনীতি ও প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তার এক মারাত্মক মিশ্রণ। এর সুষ্ঠু সমাধান না হলে রাজ্যে শান্তি বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।