বরাবাজারের বাসন্তী মাহাতো: রাজ্যের নতুন উজ্জ্বল নক্ষত্র
সর্ব প্রথমে আমাদের সবার তরফ থেকে বাসন্তী মাহাতো অনেক অনেক ধন্যবাদ। পুরুলিয়া তথা ভারতবর্ষের নাম বিশ্বমঞ্চে আনার জন্য পুরুলিয়া জেলার অন্তর্গত বরাবাজার ব্লকের রানসি গ্রামের মেয়ে বাসন্তী মাহাতো এখন রাজ্যের গর্ব দেশের গর্ব অন্তরের আন্তরিক অভিনন্দন জানায়।
খেলাধুলোর প্রতি ঝোঁক ছিল ছোট থেকেই। কিন্তু গ্রামের সাধারণ পরিবেশে তীরন্দাজির মতো খেলা শেখার সুযোগ ছিল প্রায় নেই বললেই চলে। ২০১৭ সালে পুরুলিয়া জেলা পুলিশের উদ্যোগে বরাবাজারে তৈরি হয় ‘লক্ষ্য অ্যাকাডেমি’—যেখানে প্রতিভাবান তরুণ-তরুণীদের তীরন্দাজির প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়।
সফরের শুরু: লড়াই ও পরিশ্রম
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে মাত্র ১৩ বছর বয়সে বাসন্তী অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। শুরু হয় কঠোর অনুশীলন। প্রত্যেক ভোরে সাইকেল চালিয়ে পাঁচ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে ব্লক সদরে আসা, দিনের পর দিন নিরলস পরিশ্রম, তারপর সন্ধ্যায় ক্লান্ত শরীরে বাড়ি ফেরা—এই ছিল তাঁর রুটিন। কিন্তু কোনো কিছুই তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারেনি।

সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠা
২০১৯ সালে বাসন্তী সুযোগ পান **স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (SAI)-তে** প্রশিক্ষণের। এখান থেকেই শুরু হয় তাঁর উড়ান। রাজ্যস্তর থেকে জাতীয় প্রতিযোগিতা, তারপর আন্তর্জাতিক মঞ্চ—ধাপে ধাপে তিনি নিজেকে আরও শানিত করেছেন।
এশিয়া কাপ ২০২৪-এ ব্রোঞ্জ পদক জয় তাঁর প্রতিভার প্রমাণ। কিন্তু তিনি থেমে থাকার মানুষ নন। তাঁর চোখ এখন অলিম্পিকে, যেখানে তিনি দেশকে সোনার পদক এনে দেওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
‘লক্ষ্য অ্যাকাডেমি’ ও পুরুলিয়া জেলা পুলিশের অবদান
বাসন্তীর সাফল্যের পেছনে রয়েছে পুরুলিয়া জেলা পুলিশের অসাধারণ উদ্যোগ। বরাবাজার থানার IC ও BDO-র নেতৃত্বে গড়ে ওঠা **‘লক্ষ্য অ্যাকাডেমি’** কেবল বাসন্তী নয়, আরও অনেক তরুণ-তরুণীর স্বপ্নপূরণের পথ খুলে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের তীরন্দাজ তৈরির এই প্রয়াস আজ বাস্তবে রূপ নিচ্ছে।
বরাবাজারের বাসন্তী মাহাতো: রাজ্যের নতুন উজ্জ্বল নক্ষত্র
বাসন্তী মাহাতো: পুরুলিয়ার গর্ব, দেশের গর্ব
ছোট্ট এক গ্রাম, রানসি। পুরুলিয়া জেলার বরাবাজার ব্লকের অন্তর্গত এই প্রত্যন্ত গ্রামটি এতদিন লোকচক্ষুর আড়ালেই ছিল। কিন্তু আজ এই গ্রামের নাম সমগ্র রাজ্য তো বটেই, দেশজুড়ে গর্বের সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে। কারণ,
এখান থেকেই উঠে এসেছে এক অসাধারণ প্রতিভা—বাসন্তী মাহাতো। তাঁর অধ্যবসায়, কঠোর পরিশ্রম আর আত্মবিশ্বাসের গল্প আজ লাখো মানুষের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে।
এক অসাধারণ প্রতিভা—বাসন্তী মাহাতো। তাঁর কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায় এবং ইচ্ছাশক্তি তাঁকে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। তাঁর সাফল্যের কাহিনি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত জয় নয়, এটি গোটা সমাজের জন্য এক অনুপ্রেরণার গল্প।
সংগ্রাম ও প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই
বাসন্তী মাহাতোর শৈশব ছিল চ্যালেঞ্জে ভরা। একটি সাধারণ কৃষক পরিবারে জন্ম নেওয়া বাসন্তী ছোটবেলা থেকেই দেখেছেন দারিদ্র্য কীভাবে মানুষের স্বপ্নকে দমিয়ে রাখে। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। পরিবারের সীমিত সম্পদ, সমাজের নানা প্রতিবন্ধকতা—এসব কিছুকে দূরে সরিয়ে রেখে তিনি নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছেন।
কোনো বড় শহরের সুযোগ-সুবিধা ছিল না তাঁর কাছে, ছিল না আধুনিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। তবু নিজের আত্মবিশ্বাস ও নিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন। রাতদিন কঠোর অনুশীলন, আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং শিক্ষকদের পরামর্শ মেনে চলার ফলে তিনি ধাপে ধাপে এগিয়ে গেছেন সাফল্যের পথে।
সংগ্রাম থেকে সাফল্য
দেশের সম্মান বাড়ালেন পুরুলিয়ার বাসন্তী মাহাতো
একটি সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করা বাসন্তী ছোটবেলা থেকেই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন। দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত সংসার, নানান সামাজিক প্রতিবন্ধকতা—সবকিছুকে জয় করেই তিনি এগিয়ে গেছেন। শিক্ষা এবং পরিশ্রমের প্রতি তাঁর অগাধ নিষ্ঠা তাঁকে এনে দিয়েছে এক অনন্য উচ্চতা।
রাজ্যের গর্ব, দেশের গর্ব
বাসন্তীর সাফল্য শুধু তাঁর নিজের নয়, এটি পুরো রাজ্যের গর্ব। তাঁর অসাধারণ প্রতিভা, একাগ্রতা ও লড়াই করার মানসিকতা তাঁকে দেশের গর্বে পরিণত করেছে। পুরুলিয়ার এই মেয়ে প্রমাণ করে দিয়েছেন, প্রতিকূলতা যত কঠিনই হোক না কেন, ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রমের মাধ্যমে সবকিছু জয় করা সম্ভব।
বাসন্তীর অসাধারণ প্রতিভা এবং অর্জন আজ পুরুলিয়া জেলা তো বটেই, গোটা পশ্চিমবঙ্গের গর্ব। তাঁর সাফল্য প্রমাণ করে যে প্রতিভার বিকাশের জন্য শহুরে সুযোগ-সুবিধা বা আর্থিক সমৃদ্ধিই শেষ কথা নয়, মূল চাবিকাঠি হলো অধ্যবসায়, কঠোর পরিশ্রম ও আত্মবিশ্বাস।
তাঁর জয়যাত্রা প্রমাণ করে দিয়েছে যে গ্রামের সাধারণ মেয়েরাও যদি সঠিক দিকনির্দেশনা এবং পরিশ্রমের সুযোগ পায়, তবে তারা আন্তর্জাতিক মঞ্চেও উজ্জ্বল হয়ে উঠতে পারে।
অনুপ্রেরণার প্রতীক
বাসন্তী মাহাতো আজ লক্ষ লক্ষ তরুণ-তরুণীর জন্য অনুপ্রেরণা। তাঁর সাফল্যের গল্প বলে দেয়, সুযোগ না থাকলেও লড়াইয়ের মানসিকতা থাকলে পথ তৈরি হয়ে যায়। তাঁর এই অসামান্য কৃতিত্বকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।
তরুণ প্রজন্মের অনুপ্রেরণা
বাসন্তী মাহাতো আজ লক্ষ লক্ষ তরুণ-তরুণীর জন্য এক জীবন্ত অনুপ্রেরণা। তাঁর জীবনের গল্প বলে দেয়—কোনো প্রতিকূলতাই স্বপ্নপূরণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না, যদি মানুষ নিজেকে নিবেদিত করতে পারে। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, ইচ্ছাশক্তি থাকলে সীমাবদ্ধতাকে জয় করা সম্ভব।
পরিবার ও সমাজের ভূমিকা
বাসন্তীর সাফল্যের পেছনে রয়েছে তাঁর পরিবারের অগাধ সমর্থন ও আত্মত্যাগ। অর্থনৈতিক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও তাঁর পরিবার কখনও তাঁর স্বপ্নকে ভাঙতে দেয়নি, বরং সবরকম সহায়তা করেছে।
শিক্ষক, বন্ধু ও গ্রামবাসীর উৎসাহও তাঁকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। এই সহযোগিতা প্রমাণ করে, সমাজ যদি প্রতিভাকে সম্মান দেয় এবং সহযোগিতা করে, তাহলে প্রতিটি গ্রাম থেকেই উঠে আসতে পারে নতুন বাসন্তী মাহাতো।
বাসন্তীর ভবিষ্যৎ ও আশাবাদ
বাসন্তী মাহাতোর এই অসাধারণ সাফল্যের যাত্রা কেবল শুরু। আগামী দিনে তিনি আরও বড় সাফল্য অর্জন করবেন, দেশকে গর্বিত করবেন—এই আশাই রাখি। রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত এমন প্রতিভাদের আরও বেশি করে সাহায্য করা, যাতে তারা আরও উন্নতি করতে পারে এবং ভবিষ্যতে আরও উজ্জ্বল সাফল্য অর্জন করতে পারে।
বাসন্তী মাহাতো শুধুমাত্র একজন সফল মেয়ে নন, তিনি একটি আন্দোলনের প্রতীক, যিনি দেখিয়ে দিয়েছেন যে সংকল্প ও পরিশ্রমের মাধ্যমে যে কেউ নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে। তাঁর সাফল্যে আজ রানসি গ্রাম যেমন গর্বিত, তেমনই সারা দেশও তাঁকে নিয়ে গর্ব অনুভব করছে।
বাসন্তীর এই অদম্য লড়াই, প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে জেতার গল্প আজ লক্ষ লক্ষ তরুণ-তরুণীর অনুপ্রেরণা। তাঁর কীর্তি প্রমাণ করে, সুযোগ পেলেই গ্রামের প্রতিভারা আন্তর্জাতিক মঞ্চে ঝলসে উঠতে পারে। এই মাটির মেয়ে যেন আগামী দিনে আরও বড় ইতিহাস গড়তে পারেন—এই শুভকামনাই রইল।